Facebook Youtube Twitter LinkedIn
...
তিন বছরে হবে ৭২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান

করোনা মহামারির প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে কাজের বাজারের দুর্দশার অবস্থা স্পষ্ট হয়ে পড়েছিল। সারা দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেই কার্যত তালা পড়ে এবং কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামে ফিরে যান বহুসংখ্যক কর্মজীবী। এ খাতের অবস্থা কতটা শোচনীয়-তা বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে খুব সহজেই ধারণা পাওয়া যায়। সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হওয়ার কথা। এবার মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে সামনের দিনগুলোতে কাজের বাজারের অবস্থার উন্নতি হবে। ২০২২-২৫ (৩ অর্থবছরে) মধ্যে প্রায় ৭২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এরমধ্যে ৫১ লাখ ৩০ হাজারই দেশের ভেতর। আর ২০ লাখ ৬০ হাজার বিদেশে।
সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে হবে বেসরকারি খাতে। এ জন্য দরকার বিনিয়োগ। কিন্তু গত এক দশক ধরে দেখা যাচ্ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের হার জিডিপির ২২ থেকে ২৩ শতাংশের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ বছর শুধু এই হার ২৬ শতাংশে নিয়ে গেছে। তার মতে, বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না।
৯ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এ বাজেটে প্রাধান্য পাবে। অতিমারির তৃতীয় বছরে এসে আমাদের অগ্রাধিকার হবে আয়বর্ধন ও কর্মসৃজনের ধারা অব্যাহত রাখা।
সূত্রমতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় কাজের বাজারের গতিবিধি তুলে ধরে বলা হয়, সরবরাহের দিক প্রতিবছরই ২ দশমিক ২ শতাংশ হারে নতুন শ্রম শক্তি বাড়বে। তবে কাজের বাজারে নতুন এই মুখ একই হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি।এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ৩ বছরে অতিরিক্ত ৪৭ লাখ ৬০ হাজার নতুন মুখ কাজের বাজারে প্রবেশ করবে। তাদের কাজের ব্যবস্থা করতে হলে বছরে প্রায় ১৬ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় ওই হিসাবে বছরে দেশের ভেতর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার।
কর্মসংস্থানের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের কৌশল হিসাবে সরকার আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি নীতি সংস্কারের হাত দেবে। বিশেষ করে বাণিজ্য নীতি সংস্কার, প্রতিযোগিতামূলক বিনিময় হারের মাধ্যমে কার্যকর আমদানি নীতি প্রতিস্থাপন এবং জোর দেওয়া হবে রপ্তানি নীতির ওপর। একই সঙ্গে কৃষিতে ইনপুট সরবরাহ, মূল্যনীতি সহায়তা, সেচ ও ঋণ সুবিধা, পণ্য বিপণনে সহায়তা এবং মাছ ও পশুপালন খাতে ভূমিহীন, দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের আয় বাড়ানো কর্মসূচিও নেওয়া হবে।
কর্মসংস্থানের একটি বড় খাত হচ্ছে কুটির ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএসএমই)। এ খাতকে আরও গতিশীল করাসহ প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। রপ্তানিমুখী উৎপাদন ভিত্তিতে প্রণোদনা, কৃষির বহুমুখীকরণ এবং উৎসাহ দেওয়া হবে প্রযুক্তি খাতকেও।বিআইডিএসের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ আর স্নাতক পর্যায়ে ৩৭ শতাংশের মতো। মহামারির আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলে মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে বেকার জনগোষ্ঠীর যে সংখ্যা তার থেকে ২০২২ সালে এ সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি বেড়েছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে জানানো হয়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শূন্য পদের সংখ্যা তিন লাখ ৯২ হাজার ১১৭ জন। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে লকডাউনের সময়কালে সরকারের ফাঁকা থাকা পদ পূরণের কাজ অনেকটাই থমকে ছিল। ২০২১ সালের শেষ দিকে বিধিনিষেধ শিথিল হতে থাকলে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে সার্বিক পরিস্থিতি হলো এখনও কর্মহীন লোকের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার প্রকোপের তুলনায় কাজের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তার মান ও মজুরি আগের জায়গায় পৌঁছায়নি। তবে কর্মসংস্থানের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের অঙ্ক সন্তোষজনক নয়। কোভিড-১৯ পরবর্তী এখন বিনিয়োগ স্বাভাবিক গতিতে ফেরেনি। যদিও প্র্রস্তাবিত বাজেটে ১৪ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ১১ লাখ ৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা (২৪ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং সরকারি বিনিয়োগের অঙ্ক হলো ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (৬ দশমিক ৬ শতাংশ)।
এদিকে বৈশ্বিক সংকটে অস্থিতিশীলতায় কাটছে বিশ্ব অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থান। এরমধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে পাঠানো নিয়ে যে তিন বছর মেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করা হয়েছে, এ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের মতে, নতুন করে কর্মসংস্থান নয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজমান অবস্থায় এত বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয় না। আরও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সরকারের হাতে নয়। এটি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।

COLLECTED FROM JUGANTOR



Do you Need Any Help?